ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে নগরীর ঈদ বাজার। ইফতারের পর থেকে বিভিন্ন শপিং মল এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, মার্কেটগুলোতে এবার গলাকাটা দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম অনেক বেশি জানিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে। এছাড়া পোশাকের উৎপাদন এবং আমদানি খরচও বেড়ে গেছে। তাই গতবারের তুলনায় দামও একটু বাড়তি রয়েছে। এদিকে প্রতি বছরের মতো এবছরও বিদেশী পোশাকে সয়লাব ঈদের বাজার।
দেশীয় উদ্যোক্তারা জানান, নগরীর টেরি বাজার এবং রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন বড় বড় শপিংমল জুড়ে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি পণ্যের আধিক্য রয়েছে। এসব পণ্যের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের আবার আগ্রহও বেশি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- অধিকাংশ পণ্যই আসে কর ফাঁকি দিয়ে। তাই ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কম দামে চাইলেই এসব পণ্য বিক্রি করে দিতে পারেন।
অন্যদিকে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ প্রতি বছর ফেব্রিক্সসহ বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তবে বিদেশী পোশাকের বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত। আমাদের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে এসব পণ্য আসে এমন খবর আমরা বিভিন্ন সময় পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
গতকাল সরেজমিনে নগরীর টেরিবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকুমন্ডি লেইন, ভিআইপি টাওয়ার, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা এবং শপিং কমপ্লেঙে ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকজন বিক্রেতারা শো রুমে তাদের পণ্য সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আবার কিছু বিক্রেতা ক্রেতাদের সাথে বিভিন্ন ড্রেসের খুটিনাটি বিষয় শেয়ার করছেন। ক্রেতারাও পছন্দের ড্রেসটি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে, স্যানমার ওশান সিটি, ইউনেস্কো সেন্টার, আমিন সেন্টার শপিং ফিনলে স্কয়ার, আফমি এবং মিমি সুপার মার্কেটে। নগরীর তামাককুমন্ডি লেইনে পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন চাকরিজীবী সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, মেয়ের জন্য ফ্রক, স্ত্রীর জন্য শাড়ি এবং আমার জন্য একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। যদিও ঈদের বাজার এখন পর্যন্ত সেভাবে জমে উঠেনি। স্যানমারের ব্যবসায়ী আমির উদ্দিন বলেন, ঈদের বাজার গত দুইদিন ধরে জমতে শুরু করেছে। ইফতারের পর থেকে কিছু ক্রেতা আসছেন। দিন দিন এখন বিক্রিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার এবং টেরি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের চেন্নাই, কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরু, দিল্লি ও জয়পুর থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি এসেছে। এগুলোর মধ্যে জুট কাতানের দাম ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা, রাজস্থান সিল্ক ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, ভেলবেট সিল্ক ২০ থেকে ৩৫ হাজার, চেন্নাই কাতান ১০ থেকে ১৫ হাজার, বেনারসি ১৫ থেকে ৪০ হাজার, নেটের শাড়ি ৪ থেকে ১০ হাজার, ব্যাঙ্গালুরু কাতান ৫ থেকে ১০ হাজার, কাঞ্চিভরম ১০ থেকে ১৫ হাজার, টাঙ্গাইল সিল্ক ৭০০ থেকে ২ হাজার এবং দেশি সুতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মেয়েদের থ্রি পিচ এবং গাউনের চাহিদাও রয়েছে বরাবরের মতো। এবার গরমের কথা মাথায় রেখে হাল্কা সুতির ওপর কাজ করা কামিজের কদরই বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। এছাড়া নানা ধরনের কালারপুল জামা তো আছেই।
ফিনলে স্কয়ারের ‘রাহা’ বুটিক হাউসের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা দামেরও থ্রি পিস রয়েছে। তবে সাধারণত সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে জামাগুলো বেশি চলে। ফিনলে স্কয়ারে আসা গৃহিনী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এবার বাজারে ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকাচ্ছেন খুব বেশি। তিন হাজারের টাকা নিচে কোনো শাড়িই পাওয়া যাচ্ছে না। রিয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস উদ্দিন জানান, ঈদ উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছি বাচ্চাদের ফ্রক পাওয়া যাবে ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজা ৫০০ টাকায়। অন্যদিকে বড়দের কামিজ পাওয়া যাবে ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দামের। প্লাজো সেট ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, সুতি ফ্রক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, গাউন সেট পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। আফমি প্লাজার শো-রুম ‘বাংলার মেলা’র বিক্রেতারা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীদের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং থ্রি-পিস আনা হয়েছে। পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার পর্যন্ত। এছাড়া শাড়ি পাওয়া যাবে ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
নগরীর পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদের বাজার ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে। বেচাবিক্রিও বাড়ছে। বিশেষ করে ইফতারের পর থেকে ক্রেতারা মার্কেটমুখী হচ্ছেন। আমরা আশা করছি ১৫ রমজানের পরে বাজার পুরোপুরি জমে উঠবে।
রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় রিয়াজুদ্দিন বাজারে ক্রেতা সমাগম ভালো। সপ্তাহ খানেক পরে বাজার পুরোপুরিভাবে জমবে। অনেক ক্রেতা এখনো অপেক্ষা করছেন।