উত্তেজনা বাড়িয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এর আগে ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানে, তবে তার জবাবে তারা ‘যথাযথ ও কার্যকর’ পদক্ষেপ নিবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ছিল রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলেছি, রাশিয়ায় এই ধরনের হামলা ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর শামিল হবে।’
অপরদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, এটি হবে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সামরিক জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’।
এদিকে, এ সপ্তাহের শুরুতে ক্রেমলিন তার পারমাণবিক নীতিতে আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে। এতে রাশিয়ার মাটিতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সহায়তায় কোনো হামলা হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে সম্ভাব্য জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে এখন কেমন জবাব দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উঠছে সেই প্রশ্ন।
রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কতটুকু
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে পশ্চিমা দেশগুলো যাতে না জড়ায়, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বেশ আগে থেকে নিজ কৌশলগত অস্ত্রসম্ভার নিয়ে জোরশোরে প্রচার–প্রচারণা চালায় মস্কো। তবে সব হুমকি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের স্থাপনাগুলোতে অস্বাভাবিক কোনো চলাচলের লক্ষণ দেখেনি। এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বাহ্যিকভাবে রাশিয়ার কৌশলগত যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েনে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের ধারণা, রাশিয়ার এখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার সম্ভাবনা নেই। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার বিষয়ে সতর্ক করে দেন তারা।
জাতিসংঘের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইউএন ইনস্টিটিউট ফর ডিসআর্মামেন্ট রিসার্চ’ এর জ্যেষ্ঠ গবেষক পাভেল পডভিগ বলেন, ইউক্রেনে পারমাণবিক বোমা ফেলার বিষয়টি মস্কোর বিকল্পের তালিকায় আছে বলে মনে করেন না তিনি।
প্রাথমিকভাবে এর কারণ, এটি মস্কোর কোনো ধরনের সামরিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে না। তা ছাড়া এ মুহূর্তে ইউক্রেনে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী।
উপরন্তু, ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে সেটি হবে ১৯৪৫ সালের পর এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের প্রথম ঘটনা। আর সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের বড় অংশ এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে, যা অনুমান করা মস্কোর জন্য হয়তো সহজ হবে না, যুক্তি দেন পডভিগ।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্লুস্কাইয়ে পাভেল পডভিগ বলেন, ‘তাই, এটি হবে বড় জুয়া খেলার মতো। তবে, ক্রেমলিন তার সুযোগ কাজে লাগাতে প্রস্তুত, আমি এ ধারণাকে বাদ দিচ্ছি না। বিশেষ করে, মস্কো যদি মনে করে, বর্তমান সংঘাতে সে দুর্বল সাড়া দিচ্ছে। আর রাশিয়া এ জুয়া খেলবে কি না, তা আমরা জানি না।’
পশ্চিমাদের অন্য কোনভাবে জবাব দিতে পারে রাশিয়া
শত্রুদের মোকাবিলায় বর্তমানে লড়াইয়ের হাইব্রিড কৌশল বেশ ভালোভাবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। শান্তি ও সংঘাতের মাঝামাঝি স্থান ‘গ্রে জোন’–এ এমন কৌশল কাজে লাগাচ্ছে দেশটি।
রাশিয়া পশ্চিমা দেশসমূহ অভিমুখী অভিবাসীদের অস্ত্রে সজ্জিত করছে। তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও ফিনল্যান্ড সীমান্তে। এর লক্ষ্য, ওইসব দেশে রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করা।
পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কাদের কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া
পশ্চিম দেশগুলোতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে মস্কো তার মিত্র ও প্রক্সি গ্রুপগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলছে। গত মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোহিত সাগরে পশ্চিমা দেশগুলোর পণ্যবাহী জাহাজ নিশানা করতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিচ্ছে রাশিয়া।
ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এমআই ফাইভের প্রধান গত মাসে বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অগ্নিসংযোগ, অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতাসহ বিশৃঙ্খলা তৈরি করার মিশনের অংশ হিসেবে রুশ গোয়েন্দারা অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নাটকীয়ভাবে তাঁদের যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
এদিকে, রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বিমান হামলার সুনির্দিষ্ট সতর্কবার্তা পাওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে দূতাবাস বন্ধ করে কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।