ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বাঘড়ি গ্রামের অশীতিপর সরবানু। তিন ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তার সাজানো সংসার। বড় ছেলে মারা যান কয়েক বছর আগে। মেয়েরা থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। ছেলেদের অভাবের সংসারে তার বাস।
১০ বছর আগে একদিন মাটিতে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান তিনি। চিকিৎসার অভাবে এক পর্যায়ে অচল হয়ে যান। ইতোমধ্যে হয়ে যান পুরো পুরো অন্ধও। নিজে একা একা চলতে পারেন না, বিছানাতেই সবকিছু সারতে হয় তাই তাকে। সামর্থ্যহীনতা আর অপারগতার কারণে ছেলেরা একদিন মাকে রেখে আসেন পাশের পরিত্যক্ত গোয়ালঘরে, একটি ভাঙা চৌকিতে।
জরাজীর্ণ ওই গোয়ালঘরেই সরবানুর আজ প্রায় তিন বছর। আধা পেট আর বিনা চিকিৎসায় চলে তার প্রতিদিন।
সরজমিনে গেলে দেখা যায় ছেলেদের বসতঘরের উত্তর পাশে একটি গোয়ালঘর, প্লাস্টিক বস্তার বেড়া, ঘরে ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধযুক্ত বিছানা। সেখানে প্রায় অর্ধ আবরণে শুয়ে আছেন তিনি। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। বিছানার ওপর রাখা একটি পাত্রে পানি, দুটি মরিচ, খানিকটা লবণ, ময়লাযুক্ত একটি বাটি। হাতড়ে এসব নিতে হয় বলে বিছানাতেই এসব।
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘এ বৃদ্ধার বিষয়ে আমি জানতে পেরে দেখতে গিয়েছিলাম তাকে। তার স্মরণশক্তি ভালো। বংশীয় পরিবারের সন্তান তিনি। কিন্তু অশিক্ষা বা অসচ্ছলতা যেটাই বলুন, তার সন্তানদের অবহেলা ও অবজ্ঞার জন্যই আজ তার এ দুরবস্থা। পিঁপড়ার কামড়ে জর্জরিত হয়ে সেখানে দিন কাটাচ্ছেন। যখন পায়ে ব্যথা পেয়েছিলেন, তখন যদি মায়ের প্রতি ভালোবাসার টানে সন্তানরা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতেন, চিকিৎসা করাতেন, তাহলে এ দুর্ভোগ হতো না তার।’
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক এরই মধ্যে জেনেছেন বিষয়টি। সরকারি সফরে অস্ট্রেলিয়ায় এখন তিনি। সেখান থেকেই নির্দেশনা দিয়েছেন- শিশুসদনে যেন থাকার ব্যবস্থা করা হয় সরবানুর।