শাবলু শাহাবউদ্দিন,পাবনা ::
ইছামতী নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাবনা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১২০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক ইছামতি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ০৯। ইছামতি নদীটি পাবনা জেলার সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নে প্রবহমান পদ্মা হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার বেড়া উপজেলার পৌরসভা এলাকা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে হুরাসাগর নদীতে নিপতিত হয়েছে। এই নদীতে আগে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকলেও বর্তমানে মৌসুমি প্রকৃতির এই নদীতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। শুকনো মৌসুমে নদীটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ফলে এই এলাকায় দেখা যায় চরম পানির সংকট । সৃষ্টি হয় কৃষি কাজে পানির চরম সংকট ।
কোন এক সময় এই নদী দিয়ে মালবাহী টলার, ফেরি, লঞ্চ, নৌকা চলতো। ফলে পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল ফেরি ঘাট । বহু বছর হল সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ না থাকায়। পানির প্রবাহ আবারো ফেরানোর জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও কাজে কাজ কিছুই হচ্ছে না। খাতা কলমে থেকে যাচ্ছে এ মহান পরিকল্পনা।
দখল করে এই নদীতে জায়গায় জায়গায় বাঁধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ, কোথাও গড়ে উঠেছে ইটের ভাঁটা। পাবনার শহরে একাধিক বার নদী দখল মুক্ত করার পরিকল্পনা করা হলেও, মাঠে নেবে নেওয়া হয়নি তেমন একটি জোড়ালো পদক্ষেপ । নদী রক্ষা কমিশন কেন এই নদী উদ্ধারে নীরব তা স্থানীয় মানুষের অজানা।
৪৪ কিলোমিটার এই নদী এখন অধিকাংশ মানুষের ভোগদখলে । যতটুকু এখন ভোগদখলে বাইরে আছে তাতে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা । ফলে নদী এখন সম্পূর্ণ রুপে অচলাবস্থা । এই ইছামতী নদী পাবনার শহরের পৌরসভার মধ্যে যে অংশটুকু পড়েছে সেই অংশটুকু অবস্থা সবচেয়ে বড় নাজেহাল, ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে রূপান্তরিত হয়েছে নদীর এই পৌর অংশটুকু । নদীর বাকি অন্য অংশ কোথাও ইটের ভাটা, কোথাও কচুরিপানা ভরপুর, কোথাও ভরাট করে বাড়ি, কলকারখানা , কোথাও কৃষি কাজ, আবার কোথাও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে , আবার কোথাও নদী ভরাট করে গড় উঠেছে রাস্তা ।
এভাবে নদীকে ধ্বংস করে দেওয়ার ফলে শুকনো মৌসুমী চরম পানির সংকট এবং বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে পাবনায় । এই দুরবস্থার থেকে পাবনাবাসীদের বাঁচাতে হলে ইছামতী নদীকে দখল মুক্ত করতে হবে এবং খনন করে গভীরতা বৃদ্ধি করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে , যাতে ভবিষ্যতে শুকনো মৌসুমে পানির সংকট এবং বর্ষা মৌসুমে বন্যার হাত থেকে এই এলাকার মানুষ উদ্ধার পায় ।