এস.এম রায়হান.কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) ::
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মাঝি একাধিক। দলীয় মনোনয়ন পেতে আ.লীগ প্রার্থীদের চলছে কেন্দ্রীয় লবিং। অন্যদিকে বিএনপিতে একক প্রার্থীর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে দলটি। এদিকে কোটচাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে চলছে উৎসবের আমেজ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন মানুষ চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন জনসমাগম স্থানগুলোতে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করছে। এলাকার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন ভাবে লাগানো হয়েছে প্রার্থীদের ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ও ব্যানার। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন ভোটারদের কাছে পৌছাচ্ছেন, তেমনি দলের নীতি-নির্ধারকদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। এমনকি প্রচারণার একটি বড় মাধ্যম হিসাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক কে ব্যবহার করছেন। আ.লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও গণসংসোগ করে যাচ্ছেন বর্তমান মেয়র সহ একাধিক আ.লীগ নেতা। সবাই এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরী করতে দিন-রাত মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আওয়ামীগ থেকে মেয়র পদে ৫ জনের নামের তালিকা উপজেলা ও জেলার সুপারিশে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রার্থীরা ইতিমধ্যে দলীয় চুড়ান্ত মনোনয়নের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে। অনেকে দলীয় হাইকমান্ডের নিকট বিভিন্নভাবে লবিং করছেন। বিএনপি থেকে একজন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। থেমে নেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলররা। প্রতিদিনই তারা পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গা চষে বেড়াচ্ছেন। প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, গত পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দুই দফা মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে পৌরসভার অনেক উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছি। তাছাড়া পৌর এলাকায় আমার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন কেন্দ্র সবকিছু বিবেচনা করলে তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী। তিনি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর নেতা-কর্মীদের অনুরোধে আবারো সক্রিয় হন রাজনীতিতে। পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় লবিং। তার মতে, নেতা-কর্মীদের সমর্থন ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় এবার কেন্দ্র তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে মনে করছেন। কোটচাঁদপুর পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহŸায়ক শহীদুজ্জামান সেলিম গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে প্রতি›দ্ব›দ্বীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। সেলিম দাবি করেন, গত নির্বাচনে আমি সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছি। আমার বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার মতো কোন প্রার্থী নেই। আশা করছি গত বারের ন্যায় দল এবারো আমাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে মনে করছি।
এছাড়াও আ.লীগ নেতা কাজী আলমগীর। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে ১৪ দলের একক প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি বরাবর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আছেন। পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগে থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। আলমগীর দাবি করেন,২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে এই পৌর এলাকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১০ হাজার ভোট পেয়েছিল। সেখানে ২০১১ সালের পৌর নির্বাচন করে ভোট পেয়েছি ৭’শ ৮৫। দেশ স্বাধীনের পর থেকে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী এই পৌরসভায় জয়লাভ করতে পারেনি। কারন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পৌর নির্বাচন আসলেই প্রার্থীর বাইরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে সাবেক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মীর কাসেম আলী। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের দাবিদার একজন। এর আগেও পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করেন তিনি। তারপর তিনি উপজেলা নির্বাচনে ভাইন্স চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ২হাজার ভোটে পরাজিত হন। তিনি আশা করছেন কেন্দ্র সবকিছু বিবেচনা করলে তাকে মনোনয়ন দেবেন। অন্যদিকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসাবে পৌর বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র সালাউদ্দিন বুলবুল সিডল ফুরফুরে মেজাজে আছেন। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছেন।
উল্লেখ্য: নির্বাচন কমিশন তৃতীয় ধাপে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর নির্বাচনের তফশীল ঘোষনা করেন। তফশীল অনুযায়ী আগামী ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন এবং যাচাই-বাছাই ৩ জানুয়ারি, ১০ জানুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামী ৩০ জানুয়ারী প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে আগামী নির্বাচনে ২৭ হাজার ৪’শ ৯৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৪’শ ৮৫ এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৮ জন।