২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
বরগুনায় হাজারের ওপর ডায়রিয়া আক্রান্ত, জায়গা নেই... বকশীগঞ্জে তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস, ভোগান্তি... বৃষ্টির জন্য মোনাজাতে অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা বরগুনায় পুলিশের অভিযানে গাজাঁসহ গ্রেফতার-১ চাঁদপুরে ভূয়া কাবিননামা তৈরী, কাজী ও তার সহযোগী

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো পার হয়ে যেতে হয় বিদ্যালয়ে

 হায়াতুজ্জামান মিরাজ,আমতলী, সমকালনিউজ২৪

বরগুনার আমতলী কুকুয়া ইউনিয়নের ২০নং পূর্ব কেওয়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসতে হয়। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় কোন দূর্ঘটনা। স্থানীয়দের দাবী এখানে একটি ব্রীজ অথবা পুল নির্মানের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, আমতলী উপজেলার পূর্ব কেওয়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কুকুয়া ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নে সংযোগস্থলে খাকদোন নদীর দক্ষিন পারে অবস্থিত। বিদ্যালয়টি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নেই কোন ভাল রাস্তা। বিদ্যালয়ে নেই কোন খেলার মাঠ। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপাড়া করে। এরমধ্যে অধিকাশং শিক্ষার্থী পার্শ্ববর্তী আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড গোলবুনিয়া গ্রামের। গ্রামটিতে বেশীরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে। এ গ্রামে নেই কোন কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়। সে কারনে সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অভিভাবকরা পার্শ্ববর্তী কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেওয়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া করান। বিদ্যালয়ে যেতে এ গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খাকদোন নদীর উপর স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত বাঁশের সাকো পার হয়ে যেতে ও আসতে হয়। রাস্তাঘাট ভাল না থাকায় বর্ষা মৌসুম এলেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। যারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় তাদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে অভিভাককরা থাকে টেনসন ও দুঃশ্চিন্তায়। প্রতিনিয়ত এ বাঁশের সাকো পার হতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয় অনেক শিক্ষার্থী। তাড়াহুরো করে সাকো পার হতে গিয়ে অনেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়। অনেক সময় তাদের হাতে থাকা বই-কলমও নদীতে পড়ে যায়। স্থানীয়দের দাবী সরকারীভাবে এখানে একটি পুল অথবা ব্রীজ নির্মানের।

বিদ্যালয় সংলগ্ন ষ্টেশনারী ও খাবারের দোকানের মালিক মোঃ ফজলুল করিম বলেন, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গোলবুনিয়া গ্রামে হিন্দু ধর্মের লোকজনের বসবাস বেশী। আর তাদের ছোট ছোট বাচ্ছারা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। প্রায়ই ঘটে দূর্ঘটনা। এখানে একটি ব্রীজ নির্মান করা একান্ত প্রয়োজন।

বরগুনা জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, এই গ্রামের পাশেই আমার জন্মস্থান। বিষয়টি আমি জেলা পরিষদের সভায় বলেছি। আশাকরি কোমলমতি শিক্ষার্থীর কথা ভেবে এখানে একটি ব্রীজ নির্মানে জন্য কিছু একটা করতে পারবো।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাগর চন্দ্র, ফাতেমা, জয়া রানী, নিরব, কবিতা, স্বর্না, ও শুলতা দাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে যেতে আসতে বাঁশের সাকো পার হতে হয়। বর্ষার সময় সাকো পার হতে অনেক সমস্যা হয়। অনেকে সাকো থেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়।

অভিভাবক শৈলেন শাহা, বাবুল শাহা, ববিতা রানী, সজল শাহা বলেন, আমাদের গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় পার্শ্ববর্তী কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেওয়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হচ্ছে। এ বিদ্যালয়ে যেতে নেই কোন ভাল রাস্তা। সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রতিদিন আমাদের সন্তানদের খাকদোন নদীর উপড়ে স্থানীয়দের নির্মিত বাঁশের সাকো পার হয়ে যেতে হয়। ঐ সাকো পার হতে গিয়ে প্রতিদিন কমবেশী দূর্ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুমে দূর্ঘটনা বেশী ঘটে। বিদ্যালয়ে বাচ্ছাদের পাঠিয়ে আমরা অভিভবাকরা টেনসনে থাকি। কখন জানি বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করবো এখানে একটি পাকা ব্রীজ নির্মান করার জন্য।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ নদীতে বাঁশের সাকো তৈরী করা হয়েছে। প্রতি ৬ মাস পরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবকরা মিলে এই সাকো মেরামত করে আসছে। এলাকাটিও অবহেলিত বিদ্যালয়ে আসার রাস্তাগুলোও কাঁচা ও কদমাক্ত। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো রাস্তাগুলোর উন্নয়ন ও খাকদোন নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মান করে দেয়ার জন্য।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, বিদ্যালয়ের আশ-পাশের সড়কগুলো ভাল না। যে কারনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ায় অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বেশী সমস্যায় পড়ে। আমতলী-পটুয়াখালী মহাসড়কের হাজীরহাট (ব্রিকফিল্ড) থেকে একটি পাকা রাস্তা যদি বিদ্যালয় পর্যন্ত নির্মান করা যেত তাহলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কিছুটা কমতো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাঃ খাদিজা বেগম, বিদ্যালয়টি দুটি ইউনিয়নের সিমান্তে অবস্থিত। উন্নয়নের দিক থেকে এলাকাটি বেশ অবহেলিত। এখানে চলাচলের জন্য নেই কোন ভাল রাস্তা। প্রতিদিন বাঁশের সাকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তাড়াহুরো করে সাকো পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে তারা। এ নদীতে একটি ব্রীজ ও প্রধান সড়ক থেকে বিদ্যালয়ে সাথে সংযোগ সড়ক নির্মানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবী জানিয়ে আসলেও তারা শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এখানে একটি ব্রীজ নির্মানের চেষ্টা করবো।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যাদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, বিষয়টি অনেক আগ থেকেই আমি জানি। বিদ্যালয়ের সাথে সংযোগ সড়ক ও একটি ব্রীজ নির্মান একান্ত প্রয়োজন। তিনি অচিরেই এ বিষয়ে আশুসমাধানের আশ্বাস দেন।

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
বরগুনা বিভাগের সর্বশেষ
বরগুনা বিভাগের আলোচিত
ওপরে