গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপতালে একটি ইনজেকশন পুশের পর জীবন নিয়ে সংশয়ে আছেন মরিয়ম সুলতানা মুন্নি। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন। মুন্নির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বুধবার বিকাল পর্যন্ত তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ দিকে সরকারি হাসপাতালে ইনজেকশন পুশের পর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর জীবন নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
মুন্নির চাচা জাকির হোসেন বিশ্বাস গত মঙ্গলবার রাতে এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুন্নি (২২) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদীঘলিয়া গ্রামের মো. মোশারফ হোসেনের মেয়ে।
তিনি গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। জাকির হোসেন বিশ্বাস অভিযোগ করেন, তিন মাস আগে অসুস্থ মুন্নিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সার্জারি বিভাগের ডা. তপন কুমার ম-ল তার শারীরিক পরীক্ষা করতে দেন। পরীক্ষার পর মুন্নির পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়েছে বলে জানান ডা. তপন।
এ সময় তিনি হাসপাতালে ভালো অপারেশন হয় না উল্লেখ করে মুন্নিকে বাইরের কোনো ক্লিনিকে অপারেশন করে দেবেন বলে জানান। রাজি না হওয়ায় ডা. তপন তাদের তিন মাস ঘুরাতে থাকেন। সর্বশেষ গত সোমবার গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মুন্নিকে। ডা. তপন ম-লের তত্ত্বাবধায়নে মঙ্গলবার সকালে তার শরীরে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়।
অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগেই ডা. তপনের নির্দেশে ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স শাহানাজ পারভীন ও কোহেলিকা মুন্নির শরীরে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনের পরিবর্তে ভুল করে অজ্ঞান করার ইনজেকশন পুশ করেন। এর পরই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা দায় এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে তাকে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
মুন্নির মা হাজেরা বেগম অভিযোগ করেন, মরিয়মকে ভুল ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে চিকিৎসকরা তার শ্বাসনালিতে পাইপ দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। এতে তার ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খুলনায় ভর্তি করা হলেও এখনো জীবন সংশয়ে রয়েছে মুন্নি। এখন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা মুন্নিকে ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় জড়িত ডাক্তার ও সেবিকাদের বিচার চান হাজেরা বেগম। ডা. তপন কুমার মল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই রোগী আমার তত্ত্ববধায়নে ছিল না। আমি নার্সদের কোনো ইনজেকশন পুশ করার কথাও বলিনি। গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত। আশা করি মেয়েটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
ইতিমধ্যে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।