২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
মহা পরিচালকের কৃষি অফিস পরিদর্শন; কর্মকর্তাদের সাথে... বকশীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি, ২২ জনের নামে... ফেইসবুকের প্রেমের টানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক... কালাইয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত বরগুনায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত

টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের শুভ সূচনা

  সমকালনিউজ২৪

A13T5833

স্পোর্টস ডেস্কঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে বুধবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে অঘটন-ঘটন-পটীয়সী নেদারল্যান্ডসকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে অপরাজিত ৮৩ রান করেন তামিম। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৩ রান তোলে বাংলাদেশ। ডাচরা ২০ ওভারে করতে পারে ৭ উইকেটে ১৪৫।

হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের কোল ঘেষেই সুউচ্চ পাহাড়। ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সামনে প্রতিবন্ধকতা ছিল যেন আরও উঁচু। ম্যাচের মাত্র এক দিন আগে ধর্মশালায় পা রেখেছিল দল। অনুশীলন সেশন পেয়েছিল মোটে একটি। সদ্য এশিয়া কাপ খেলার অবসাদ, হিমাচলের ঠাণ্ডা, উইকেট না বোঝা, উচ্চতায় মানিয়ে নেওয়ার সময় অনেক কম পাওয়া! প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ হিসেবে ডাচরাও ছিল কঠিন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা বরাবরই বড় শিকারি। সব কিছুকে হারিয়েই জিতল বাংলাদেশ। জয়ের ব্যবধান ৮ রান হলেও স্বস্তিটা অনেক বড়।

সব মিলিয়ে পারফরম্যান্সে গোছানো ছিল না বাংলাদেশের। তবে প্রয়োজনের সময় ঠিকই পথ খুঁজে নিয়েছে তারা। ব্যাটিংয়ে যেমন দারুণ দায়িত্বশীল ও পরিণত ইনিংসে দলকে লড়ার মত রান এনে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। মাশরাফি যথারীতি নেতৃত্বে ছিলেন দারুণ, বোলাররা দরকারের সময় ঠিকই করেছেন নিজেদের কাজটুকু।

১৫৪ রান তাড়ায় ডাচদের শুরুটা ছিল সাবধানী। প্রথম ৪ ওভারে রান আসে ২১। প্রান্ত বদলে আক্রমণে এসে পঞ্চম ওভারে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন আল-আমিন হোসেন। লেংথ বল পুল করে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ওয়েসলি বারেসি (৯)।

হুমকি হয়ে উঠছিল দ্বিতীয় উইকেটে স্টেফান মাইবার্গ ও বেন কুপারের জুটি। থিতু হয়ে শট খেলতে শুরু করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের গত বিশ্বকাপের নায়ক মাইবার্গ। আউট হন তিনি নাসিরকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে (২৯ বলে ২৯)। বেন কুপারও স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব আল হাসানের বলে (১৫ বলে ২০)।

ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেন চেষ্টা করেছেন রানের গতি বাড়ানোর। তবে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কখনোই লাগামটা সেভাবে ছাড়েনি বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৫৪। সাকিবকে টার্গেট করেছিলেন ডাচরা, ওভারের প্রতি বলেই স্লগ করেছেন বোরেন। নাসিরকে একবার সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। তবে ওই ওভারের শেষ বলেই আবার নাসিরের হাতে ধরা পড়েন বোরেন (২৯)।

৪ ওভারে প্রয়োজন তখন ৪২। উইকেটে মারমুখী দুই ব্যাটসম্যান টম কুপার ও রোয়েলফ ফন ডার মারউই। কিন্তু অসাধারণ এক ওভারে ডাচদের জয়ের আশা অনেকটাই শেষ করে দেন মাশরাফি। দুর্দান্ত বোলিং করে ওই ওভারে মাত্র ৩ রান দেন অধিনায়ক, আউট করেন ফন ডার মারউইকে।

পরের ওভারে দারুণ বোলিং করেন তাসকিন। বাধা হয়ে থাকা টম কুপার আউট হন আল আমিনকে রিভার্স প্যাডল করতে গিয়ে। ওই ওভারে চার-ছক্কা মেরে ম্যাচ কিছুটা জমিয়ে দিয়েছিলেন মুদাসসর বুখারি। তবে শেষ ওভারে আবারও দারুণ বোলিং করেছেন তাসকিন।

উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান দেন তাসকিন। ২৪ রানে দুটি উইকেট নেন আল আমিন, ২৮ রানে দুটি সাকিব। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন মাশরাফি।

বোলিংয়ের মতো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শেষটাও হয় দারুণ। তবে শেষের আগে পুরোটাই শুধু একজনেরই গল্প। ইনিংসের শুরু থেকে দলের হাল ধরেছিলেন তামিম, ছাড়েননি শেষ পর্যন্ত। এক প্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে গেছেন সময়ের দাবি মেনে; আরেক প্রান্তে শুধু ব্যাটম্যানদের আসা যাওয়া।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। টসের সময় দুই অধিনায়কের কাছেই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য মনে হয়েছিল ভালো। কিন্তু খেলা শুরুর পরপরই বোঝা গেল, ঠিক ব্যাটিং স্বর্গ নয় উইকেট, বরং একটু মন্থর। বল ব্যাটে এসেছে একটু থেমে, বাউন্সও কখনও কখনও ছিল খানিকটা অসমান।

ইনিংস জুড়ে উইকেটের দুই প্রান্তে দেখা গেল দুই রকমের ব্যাটিং। তামিমের ব্যাটিংয়ে অস্বস্তি ছিল সামান্যই। অন্য প্রান্তে ধুঁকেছেন বাকিরা। প্রথম ওভারেই এলোমেলো এক শট খেলে জীবন পান সৌম্য সরকার (১৩ বলে ১৫)। থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ ছাড়েন পল ফন মিকেরেন। তবে খুব দ্রুতই প্রায়শ্চিত্ত করেন নিজেই।

সাব্বির রহমানের শুরুটা ছিল সতর্ক। একটু থিতু হয়ে যখন হাত খোলার ইঙ্গিত দিলেন, আউট তখনই। রোয়েলফ ফন ডার মারউইকে উড়িয়েছিলেন মাথার ওপর দিয়ে। কিন্তু ছক্কার পরের বলেই অক্কা; সোজা বলে এলবিডব্লিউ (১৫ বলে ১৫)।

দু:সময়ের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের বোঝাপড়া হলো না এদিনও। ৫ রান করে ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেনের স্লো মিডিয়াম পেসে আউট হলেন বাজে এক শটে; অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিলেন।

বাজে শটের প্রতিযোগিতায় সামিল হলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ ও ফর্মের জন্য লড়তে থাকা মুশফিকুর রহিম। মিডিয়াম পেসার টিম ফন ডার গুগটেনের তিন বলের মধ্যে আউট দুজন। সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড মাহমুদউল্লাহ (১০)। গুড লেংথ থেকে একটু ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড মুশফিক (০)।

আরেক পাশে তখনও দারুণ খেলে চলেছেন তামিম। ৪৬ রানে বেঁচে গিয়েছিলেন স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ দিয়েও। সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। কিন্তু এক সময়ের ‘ফিনিশার’ নাসির হোসেন (৩) পারলেন না সঙ্গ দিতে।

একের পর এক উইকেট হারিয়ে রানের গতিও যায় থমকে। পরে শেষ ২ ওভারে ৩ ছক্কায় রানটা ছাড়ায় দেড়শ’। ফন গুগটেনকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন মাশরাফি। শেষ ওভারে লোগান ফন বিককে গ্যালারিতে ফেলেন তামিম। এমনকি ছক্কা মারেন আরাফাত সানিও! ৬টি চার ও ৩ ছক্কায় ৫৮ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ২০১২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে সাকিব আল হাসানের ৮৪ রান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

শেষ ২ ওভারে ওই ৩ ছক্কার প্রতিটিই ছিল মহামূল্য। ম্যাচ শেষে ওই শটগুলোই হয়ে থেকেছে ব্যবধান। এই জয়ে সাড়ে চার হাজার মিটার উচ্চতায়ও এখন স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারবেন মাশরাফিরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৩/৭ (তামিম ৮৩*, সৌম্য ১৫, সাব্বির ১৫, সাকিব ৫, মাহমুদউল্লাহ ১০, মুশফিক ০, নাসির ৩, মাশরাফি ৭, আরাফাত ৮*; ফন ডার গুগটেন ৩/২১, ফন মিকেরেন ২/১৭, বোরেন ১/৯, ফন ডার মারউই ১/২৮)

নেদারল্যান্ডস:  ২০ ওভারে ১৪৫/৭ (মাইবার্গ ২৯, বারেসি ৯, বেন কুপার ২০, বোরেন ২৯, টম কুপার ১৫, ফন ডার মারউই ১, সিলার ৮*, বুখারি ১৪, ফন বিক ৪*; আল আমিন ২/২৪, সাকিব ২/২৮, মাশরাফি ১/১৪, নাসির ১/২৪)

ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
খেলাধুলা বিভাগের সর্বশেষ
ওপরে