২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
ফরিদগঞ্জের প্রখ্যাত হোমিও ডাক্তার নারায়ণ চক্রবর্তীর... তাহেরপুরের তিনশত বছরের বৃক্ষের নাম আজো অজানা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রাণিসম্পদের বিকল্প নেই : ইউএনও... প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী সড়ক দুর্ঘটনায় সংগীতশিল্পী পাগল হাসান সহ নিহিত-২ আহত-৩

তাহেরপুরে দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল পুণ্যভূমির স্বীকৃতি আজও পায়নি

  সমকালনিউজ২৪

নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে:
বারো মাসে তের পর্বণ কথাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রচলিত থাকলেও শারদীয়া বা দূর্গা পূজাই বেশি আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রথম শুরু হয় রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর রাজবাড়ির গোবিন্দ মন্দিরে। তাই সে সময় এর নাম রাখা হয় দুর্গাপূরী। গত ৫৩৯ বছর আগে সম্রাট আকবরের শাসনামলে রাজা কংস নারায়ণ সে সময় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু করেন এ দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল হিসেবে সে জন্যই গর্ববোধ করেন তাহেরপুরের অধিবাসীরা। কিন্তু দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল হিসেবে ইতিহাসখ্যাত তাহেরপুর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যভূমি আজও স্বীকৃতি পায়নি। তবে এনিয়ে অনেক কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক নেতারা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মতে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তাহেরপুরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে প্রতি বছর শারদীয় দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের মিলনামেলায় পরিণত হতো স্থানটিতে। এদিকে ১৪৮০ সালে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম রাজা রাজশাহীর কংস নারায়ণ তাহেরপুরের তাহের খানকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। যুদ্ধ জয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে রাজ পুরোহিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শে রাজা কংস নারায়ণ দুর্গাপূজার আয়োজন করেন রাজবাড়ির গোবিন্দ মন্দিরে। তার আহ্বানে মা দুর্গা স্বর্গ থেকে সাধারণ্যে আবির্ভূত হন। সেই সময় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কংস নারায়ণ প্রথম যে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন, সেই প্রতিমা ছিল সোনার তৈরি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা স্বীকৃত পায়। দুর্গাপূজার গোড়ার কথা কালক্রমে যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য তাহেরপুরে রাজা কংস নারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজা সৃষ্টি, মন্দির ও জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটি গঠিত করেছিল। এ কমিটি লোকজন দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল তাহেরপুরকে বাঙালী হিন্দুদের শারদীয় উৎসবের পুণ্যস্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে আবেদন করেও স্বীকৃতি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। সে সময় আধুনিক দুর্গোৎসব পদ্ধতি পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী প্রণীত। এ মহাযজ্ঞের প্রথম অনুষ্ঠান হয়েছিল রাজা কংস নারায়ণ রায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ষোড়শ শতাব্দির শেষ ভাগে। অনুষ্ঠানের স্থানটি ছিল বারনই নদীর পূর্ব তীরে রামরামার অর গ্রামের দুর্গামন্দিরে। প্রথম দুর্গাপূজার সেই স্থানটি এখন ধ্বংসস্তুপ। এলাকাবাসী স্থানটি সংরক্ষণ করে ধর্মীয় তীর্থস্থান ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, তাহেরপুর ছিল রাজা কংস নারায়ণের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে বসে কৃক্তিবাস রামায়ণের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। ঐতিহাসিক এ স্থানে প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় জাতীয় উৎসব পালনের দাবি করেছেন তিনি। তবে তাহেরপুরে পর্যটকদের তীর্থস্থান করার দাবিতে ২০০২ সালে কমিটির সম্পাদক সঞ্জীব রায় মিন্টু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেন। কিন্তু পুণ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি তো দূরের কথা, এখানে উন্নতমানের একটি মন্দিরও সরকারের পক্ষ থেকে নির্মিত হয়নি আজও। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আক্ষেপ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ভোটের আগে হিন্দুদের অনেক মিথ্যা আশ্বাস দেন। কিন্তু ধর্মীয় ব্যাপারে তেমন কোনো কাজ করেন না। এখানকার রাজবাড়ীর গোবিন্দ মন্দিরে একটি বৃহৎ শিলালিপি রয়েছে। এতে দুর্গাপূজার প্রতিষ্ঠা, স্থান, সন, তারিখ ও অতীত কিছু ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ শিলালিপি ছাড়া এখানে আর তেমন কিছু নিদর্শন নেই। তাহেরপুরের দুর্গাপূরীতে দেবী দুর্গার মূলবেদী পর্যন্ত এখন নেই। বর্তমানে দুর্গাপূরীর বেদীমূলে স্থাপিত হয়েছে তাহেরপুর কলেজ। তার পাশে তিনশ’ বছরের প্রাচীন গাছটির নাম না জানার কারণে অচিন বৃক্ষ হয়ে কালের স্মৃতি বহন করছে। তবে হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে, মা দুর্গার জন্ম স্বর্গে। সব দেবতার মহাতেজশক্তি নিয়ে মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার মানসে ক্রেতাযুগে রাবনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দশরথ পুত্র মহামতি রাম মা দুর্গার অকালবোধন পূজা করেন। মা দুর্গা তার পূজায় সন্তুষ্ঠ হয়ে রাবন বধের বর প্রদান করেন। বর পেয়ে রাম লংকারাজ রাবনকে বধ করতে সক্ষম হন। এবিষয়ে এলাকার সনাতন ধর্মালম্বিদের নেতৃবৃন্দ ও বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক কার্ত্তিক সাহা জানান, ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে পুণ্যভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হলে এখানে পর্যটন নগরী গড়ে উঠবে। এছাড়া সারাবিশ্বের বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রতি বছর ঢল নামবে এখানে। এতে বাড়বে সরকারের রাজস্ব। তবে এরই ধারাবহিকতা ধরে রাখতে বাগমারা আসনের এমপি এনামুল হকের প্রচেষ্টায় অষ্টধাতুর তৈরি প্রতীমা উন্মোচন করাসহ সামনের গেট নির্মান করা হয় দুর্গাপূরীতে।#

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
রাজশাহী বিভাগ বিভাগের সর্বশেষ
রাজশাহী বিভাগ বিভাগের আলোচিত
ওপরে