২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
ফরিদগঞ্জের প্রখ্যাত হোমিও ডাক্তার নারায়ণ চক্রবর্তীর... তাহেরপুরের তিনশত বছরের বৃক্ষের নাম আজো অজানা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রাণিসম্পদের বিকল্প নেই : ইউএনও... প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী সড়ক দুর্ঘটনায় সংগীতশিল্পী পাগল হাসান সহ নিহিত-২ আহত-৩

নওগাঁয় ৩ উপজেলার ৫৩ গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

 ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ,নওগাঁ, সমকালনিউজ২৪

নওগাঁর আত্রাই এবং ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গত বুধবার (১৭ জুলাই) ভোর রাতের দিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর চকবালু (বনকুড়া) নামকস্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২২ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পর শুক্রবার (১৯ জুলাই) ভোরে নওগাঁর রানীনগরে নান্দাইবাড়ী-মালঞ্চি নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বেরি বাঁধ ভেঁঙ্গে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮ শত পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোক। মালঞ্চি গ্রামের নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের ২টি কালভার্টের নিচ দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে আত্রাই, রানীনগর, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ফসলি জমির মাঠসহ বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

সরেজমিন জানা গেছে, বাঁধ ভেঙ্গে নান্দাইবাড়ী-মালঞ্চি ও কৃষ্ণপুর গ্রামের বিস্তির্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘরসহ সবজি ক্ষেত। বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ৩টি গ্রামের মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নিচ্ছে।

গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান বলেন, আমার এলাকার ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি, মালঞ্চি, কৃষ্ণপুর ও আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি বেরিবাঁধটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে অভিভাবকহীন। ৪০ বছর ধরে কোন দপ্তর কোনদিন এই বাঁধটি সংস্কার করেনি। এমনকি এই বাঁধটিকে কোন দপ্তরই স্বীকার করে না যার কারণে সংস্কার ও উন্নয়নের কোন প্রকারের ছোঁয়া এই বাঁধে কখনো স্পর্শ করেনি।

যার ফলশ্রুতিতে বাঁধটি দীর্ঘদিন যাবত চরম ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় ছিলো। আজ বাঁধটির মালঞ্চি এলাকার কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। এতে করে নদীর তীরবর্তি কয়েকটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। শুধু বাড়ি-ঘরই নয় এই এলাকা পুকুর ও সবজির আবাদের জন্য বিখ্যাত। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই বন্যার কারণে এই এলাকা পুকুর ও শতাধিক হেক্টরের সবজির আবাদ পানিতে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও নওগাঁ-আত্রাই সড়কের বেশকিছু জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেইসব ঝুঁকিপূর্ন স্থান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় স্থানীয়রা রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ভেঁঙ্গে যাওয়া অংশে নদীর পানিতে তেমন গতি না থাকায় বন্যাকবলিত এলাকা ছাড়া অন্যান্য ফসলের তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্লাবিত ৩টি গ্রামের সবজির আবাদ ও পুকুর বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কৃষি অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে বন্যা কবলিত এলাকায় সার্বক্ষণিক থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করে তাদের জন্য সহায়তা হিসেবে ত্রান সামগ্রী বিতরন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এছাড়াও ভেঁঙ্গে যাওয়া অংশ বাঁধার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বাঁধটি পরিদর্শন করে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এদিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর চকবালু (বনকুড়া) নামকস্থানে বাঁধ ভেঙে প্রায় ২২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) ভোর রাতের দিকে বাঁধ টি ভেঙে যায়। আত্রাই নদীর পানি বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই বাঁধ ভেঙ্গেছে বলে স্থানীয়রা ও প্রশাসন জানিয়েছেন।

উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার ভোর রাতের দিকে বাঁধের ২০০ ফিট অংশ ভেঙে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যা থেকে আত্রাই নদীর ৩০ পয়েন্টে বাঁধে ফাটল দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দেখা যায়নি। এর ফলে এই ভাঙ্গন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গভীর রাতে নদীর ডান তীরে মূল বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ফাটল অংশে বালুর বস্তা ও মাটি ফেলেও ভাঙ্গন রক্ষা করতে পারেননি। দ্রুতই নদীর পানি ঢুকে পড়ছে বসতি এলাকা ও ফসলের মাঠে।

এরই মধ্যে মান্দা উপজেলার বনকুড়া, চকবালু, ভরট্ট, শিবনগর, দাসপাড়া, শহরবাড়ি, করনোভা, পারশিমলা, মহলা কালুপাড়াসহ অন্তত ৫০ টি গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আশেপাশের ফসলের মাঠ, আমন ধানের ফসল ও সবজি ক্ষেত। ক্রমেই নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। মান্দা ছাড়াও পাশের আত্রাই, রানীনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শংকা করা হচ্ছে।

সরকারী এপর্যন্ত ১০০টি পরিবারের মাঝে ১০কেজি করে চাল, ২কেজি করে চিনি ও মোমবাতি দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে জানান বানভাসী মানুষরা।মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিক ভাবে ৮২৯ হেক্টর আউশ, ৬০ হেক্টর আমন এবং ৭৫০ হেক্টর শাকসবজি বন্যায় তলিয়ে গেছে। পানির চাপ বাড়তে থাকলে আরো নিমজ্জিত হবে।

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
নওগাঁ বিভাগের সর্বশেষ
নওগাঁ বিভাগের আলোচিত
ওপরে