নাজমুল হক নাহিদ, নওগাঁ প্রতিনিধি ::
নওগাঁর সীমান্তবর্তী পোরশা উপজেলার নীতপুর ইউনিয়নের বালাশহীদ গ্রামের যুবক আমিরুল ইসলাম। অভাবের সংসার। বাবা (শারফুদ্দিন) কৃষি কাজ করে জীবিকা চলে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮জন। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। নিজেদের জমিজমা নেই। জমি বলতে বাড়িটুকুই সম্বল। বড় সন্তান হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কিছুটা কাঁধে চেপেছে। পড়াশুনা করা তেমন হয়ে উঠেনি। কৃষি কাজ করে বাবাকে সহযোগীতা করতেন। সঙ্গদোষে গত তিন বছর আগে স্বল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে গরু চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিয়ে করেছেন বছর খানেক আগে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রাখাল হিসেবে গরু আনা-নেয়ার কাজ করতেন। প্রতি জোড়া গরুতে (রাখাল) পেতেন ১০ হাজার টাকা।
শনিবার বিকেলে নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৬বিজিবি) এর আয়োজনে নীতপুর ক্যাম্পে সীমান্ত অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আত্মসমর্পণ ও আলোর পথে শপথ গ্রহন করতে অন্যান্যদের সাথে এসেছিলেন আমিরুল ইসলাম। নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যুবক আমিরুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত পার হয়ে গরু চোরাইপথে আনানেয়া করতাম। আমরা ৪/৫ জন ভোর ৫টার দিকে যেতাম এবং সকাল ৭/৮টার দিকে গরু নিয়ে ভারত থেকে ফিরে আসতাম। ভারতের লোকেরা গরু এগিয়ে নিয়ে এসে দেয়। এরপর আমরা নিয়ে আসতাম। বাংলাদেশে গাই-বাছুর ৪০/৫০ হাজার টাকা দাম। আর ভারতে ৩/৪ হাজার টাকা দাম। মহাজনরা এসব গরু বাংলাদেশে ৪০/৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আর আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার করে এসে জোড়া প্রতি পাই ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২০ জোড়া গরু পার করেছি। মাস দুই থেকে আর গরু আনানেয়া করিনি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোন মা’মলা খাইনি। এলাকায় গত কয়েকদিন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে আত্মসমর্পনের জন্য। যেহেতু বিজিবি একটা সুযোগ দিচ্ছে এজন্য আসছি। এটা করাতে ভাল হয়েছে।
একই গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, মাঠে কৃষি কাজ করতাম। দেখতাম এলাকার বেশকিছু যুবকরা গরু আনানেয়া করত। স্বল্প সময়ে তারা বেশ টাকা পেত। এরপর মহাজনদের সাথে পরিচয়। গত ৫বছর থেকে অবৈধভাবে গরু আনানেয়া করেছি। প্রতি জোড়া গরুতে ১০/১৫ হাজার টাকা পেতাম। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জোড়া গরু নিয়ে আসছি।
এছাড়া গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত নীতপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম, আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন বলেন, আমরা ভুল করে এতোদিন চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিলাম। বিজিবি আমাদের আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা করায় সুবিধা হয়েছে।
নওগাঁ-১৬ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল একেএম আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। এ সময় নওগাঁ-১৬ বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর এটিএম আহসান হাবিব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহরাব হোসেন, সহকারি পুলিশ সুপার (সাপাহার সার্কেল) বিনয় কুমার, পোরশা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর রহমান চৌধুরী, নীতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। সীমান্তের নীতপুর, হাপানিয়া ও করমুডাঙ্গা এলাকার মা’দক ও চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত ২৯৩ জন আত্মসমর্পন করেন। পরে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমরা রাতদিন সীমান্তে পাহারা দিয়ে কাজ করছি। আমার দেশের মানুষ যখন বাহিরে মা’রা যায় তখন কষ্ট লাগে। আমরা কখনো চাইনা সীমান্তে কোন অঘটন ঘটুক। আমরা অন্যায় ও অপমানের পদ থেকে বেরিয়ে আসতে একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছি।
তিনি বলেন, আমরা সীমান্তে কঠোর নীতি অবলম্বন করেছি। যারা সীমান্তে অপরাধের সাথে জড়িত তারা দেশের টাকা দিয়ে বিষ কিনে যুব সমাজকে ধ্বংস ও পুঙ্গ করছেন। এতে দেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যারা এখনো ভুল বুঝতে পারেননি তারা আলোর পথে ফিরে আ আহবান জানান।