২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
মহা পরিচালকের কৃষি অফিস পরিদর্শন; কর্মকর্তাদের সাথে... বকশীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি, ২২ জনের নামে... ফেইসবুকের প্রেমের টানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক... কালাইয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত বরগুনায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত

নারী লাঠিয়াল রুপন্তীর কথা

 অনলাইন ডেস্ক সমকালনিউজ২৪

মঞ্জুরীন সাবরিন চৌধুরী যিনি রুপন্তী চৌধুরী নামেই পরিচিতি পেয়েছেন তার লাঠি খেলার কারণে। লাঠি খেলার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করেছেন রুপন্তীর দাদা সিরাজুল হক চৌধুরী । ১৯৩৩ সালে তিনি সারা দেশের লাঠিয়ালদের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন।

রুপন্তীর বাবা রতন চৌধুরীও ছিলেন নামী লাঠিয়াল। আর তাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন রুপন্তী। কুষ্টিয়ার মজমপুরে রুপন্তীর জন্ম। তার বয়স যখন ছয়-সাত তখন থেকেই লাঠিখেলা শুরু করেছেন তিনি।

কেন এই আগ্রহ জানতে চাইলে বিবিসি বাংলার আফরোজা নীলাকে তিনি বলেন ‘আমার ফ্যামিলির সবাইকে দেখে বাবা, ফুপিরা, ভাই-বোন সবাইকে দেখেই লাঠি খেলার প্রতি অনেকটা আগ্রহ তৈরি হয় আমার মধ্যে। আমার পরিবারের সবাই লাঠিয়াল। আমার ফুপু হাসনা বানু ছিলেন দেশের প্রথম নারী লাঠিয়াল।’

তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া উৎসাহ-অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করে রুপন্তী বলেন, ‘আমার বাবা সবসময় চাইতেন যে আমরা নিজেরা নিজেদের মতো চলাফেরা করি। যেহেতু আমরা দুই বোন, ভাই নেই। যেহেতু আমরা মেয়ে, সেহেতু উনি চাইতেন আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠি, নিজেই যেন নিজেকে রক্ষা করতে পারি।’

রুপন্তীর মা অবশ্য লাঠিয়াল নন, তবে তিনি সবসময় মেয়েদের লাঠি খেলায় উৎসাহ দিতেন। ছোটবেলাতেই মেয়েকে তার বাবার সঙ্গে পাঠিয়ে দিতেন।

‘বিভিন্ন উৎসবে আমার বাবা যখন যেতেন, আমি তখন অনেক ছোট, মা তখন আমাকে পাঠিয়ে দিতেন বা বলতেন আমাকে যেন নিয়ে যাওয়া হয়অ’

সুলতান মেলায় বাবা রতন চৌধুরীর সঙ্গে লাঠি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন রুপন্তী, সেই থেকেই রুপন্তী আর থামাননি তার খেলা। লাঠি, সড়কি, তলোয়ার ও রামদাও চালাতে পারেন তিনি।

খেলার অনুশীলন যখন করেন অনেক আঘাতও পান তিনি। খেলতে খেলতে নখ উঠে যায়, গাল কেটে যায়। রুপন্তীর বোনের ভাষায় ‘আপু লাঠি খেলা ভালো জানে বলে কম ব্যাথা পায়, অন্যরাতো আরো বেশি আঘাত পায়।’

রুপন্তী খেলা শিখেছেন ওস্তাদ ওসমান সরদারের কাছে।

রুপন্তীর ভাষায় ‘তাঁর কাছে লাঠি খেলা শেখা বলা যায় যে দাদার কাছে শেখার মতোই। উনি আমার দাদার হাতে তৈরি, দাদার কাছে লাঠি খেলা শিখেছেন। যেহেতু দাদা বেঁচে ছিলেন না, আমার ওস্তাদ ওসমান সরদার চেয়েছিলেন দাদার কাছ থেকে শেখা কৌশল যেন আমাকে কিছুটা হলেও উনি দিয়ে যেতে পারেন।’

এসএসসি পরীক্ষার আগে রুপন্তীর বাবা মারা যান। রেজাল্টের পর বিয়েও হয়ে যায় তার।

তবে বিয়ের পর পড়ালেখা ও লাঠি খেলা একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন রুপন্তী। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ছেন।

‘আমার দাদা লাঠি খেলা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তার জন্যই বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে উঠেছে। তিনি অনেক বই লিখেছেন। চেষ্টা করেছেন মার্শাল আর্টের সাথে লাঠি খেলা কম্বাইন্ড করে যেটা তৈরি করা যায় -সেটা আনতে। এরপরে লাঠি খেলাটা চলে আসছে তবে মার্শাল আর্ট কিছুটা বাদ পড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি আবার নতুন করে মার্শাল আর্ট লাঠিটা কম্বাইন্ড করার জন্য।’

‘আমার দাদার স্বপ্ন ছিল লাঠি খেলাটা একদিন বিশ্বে পরিচিতি অর্জন করবে দেশীয় ঐতিহ্য হিসেবে । সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে যেতে চাই’বলেন রুপন্তী।

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
ওপরে