(স্পোর্টস ডেস্ক): এখন পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। অভিষেক ঘটে ১৯৯৯ টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন মনে রাখার মতো কিছু ইনিংস।
বিশ্বকাপে মনে রাখার মতো সেরা ১০ ইনিংস
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু (১৯৯৯ বিশ্বকাপ)
বাংলাদেশের অভিষেক বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বসেছিল আমিনুল ইসলামের দল। তৃতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে ছিল বাংলাদেশ দল। ছয়ে নেমে মিনহাজুল আবেদিন তার অপরাজিত ৬৮ রানে (১৮৫/৯) স্কোর তুলে জয় পায় বাংলাদেশ। এই ইনিংস দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন মিনহাজুল।
খালেদ মাহমুদ (১৯৯৯ বিশ্বকাপ)
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসে অন্যতম সেরা দিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ৬২ রানের সেই জয়ের নায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ৩৪ বলে তার ২৭ রানের ইনিংসটি আকারে ছোট হলেও বাংলাদেশের দুই শ পার করার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল। আর তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় আমিনুল ইসলামের দল। পরে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে দুর্দান্ত ভূমিকাও রাখেন খালেদ মাহমুদ।
মোহাম্মদ আশরাফুল (২০০৭ বিশ্বকাপ)
গায়ানার প্রভিডেন্স গার্ডেনে বিশ্বকাপে সুপার এইটের সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় একাই হারিয়ে দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। শন পোলক, মাখায়া এনটিনি, জ্যাক ক্যালিস, আন্দ্রে নেলদের পাড়ার বোলার বানিয়ে আশরাফুল খেলেন ৮৩ বলে ৮৭ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ২৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রাজ্জাক, রফিক, সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায় স্মিথ, ভিলিয়ার্স, ক্যালিস, হার্শেল গিবস, মার্ক বাউচারদের নিয়ে গড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ। ৬৭ রানে জয় পাওয়া ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে ম্যাচসেরা হন আশরাফুল।
মুশফিকুর রহিম (২০০৭ বিশ্বকাপ)
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা তিন তরুণ। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম। তবে মুশফিকের ইনিংসকে তিনটার মধ্যে সেরা বলার কারণ, তিনে নেমে ম্যাচ শেষ করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৭৯ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাকিবকে নিয়ে গড়েছিলেন ৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। এই জুটি বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়।
শফিউল ইসলাম (২০১১ বিশ্বকাপ)
ইংল্যান্ডের দেওয়া ২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচই মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন শফিউল। বোলার পরিচয় ছাপিয়ে গিয়ে ২৪ বলে ২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন, নবম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়েন ৫৮ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি।
ইমরুল কায়েস (২০১১ বিশ্বকাপ)
ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে সেই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। তবে ১৬১ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে, শূন্য রানেই তামিমের ফিরে যাওয়া কিছুটা ভীতিও জাগিয়ে দিয়েছিল। জুনায়েদ সিদ্দিকি এবং শাহরিয়ার নাফিসকে সঙ্গে নিয়ে সেই ভয় আর সত্যি হতে দেননি ইমরুল। ১১৩ বলে ৭৩ অপরাজিত ইনিংস খেলে ৫২ বল হাতে থাকতেই ৬ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল।
মুশফিকুর রহিম (২০১৫ বিশ্বকাপ)
মুশফিকের ৫৬ বলে ৭১ নাকি সাকিবের ৫১ বলে ৬৩। ১১৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিব-মুশফিকের ১১৪ জুটিতে ভর করে আফগানিস্তানকে ২৬৮ রানের লড়াকু টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। মাশরাফির আগুন ঝরানো বোলিংয়ে আফগানদের ১৬২ রানেই বেঁধে ফেলে টাইগাররা। ১০৫ রানের বিশাল জয় দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে তারা।
তামিম ইকবাল (২০১৫ বিশ্বকাপ)
বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয় পায় বাংলাদেশ। ৩১৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকের সঙ্গে ১৯৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান তামিম। ১০০ বলে ৯৫ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তামিম। মাহমুদউল্লাহ ৬২ বলে ৬২ এবং মুশফিক ৪২ বলে ৬০ রান করে জয়ের পথে রানের চাকা সচল রাখেন। সেই ম্যাচে আরও একটি রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। এক ম্যাচে চার ব্যাটসম্যানের ফিফটি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বিশ্বকাপ ২০১৫)
অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৮ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে একাই টেনে তোলেন রিয়াদ। দলীয় ৯৪ রানে সৌম্য বিদায় নিলে, মুশফিকের সঙ্গে গড়েন ১৪১ রানের জুটি। তুলে নেন বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এবং নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। পরে রুবেল হোসেনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মাহমুদউল্লাহ। পূরণ হয় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন!
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২০১৫ বিশ্বকাপ)
হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরও একটি রেকর্ড গড়েন রিয়াদ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির রেকর্ড। বিশ্বকাপে যেখানে প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬ বছর! সেখানে মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে পর পর দুটি সেঞ্চুরি করে নতুন নজির গড়েন মাহমুদউল্লাহ। গাপটিলের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৭ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের দেওয়া ২৮৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। তবে ১২৩ বলে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদউল্লাহ।