বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই ,যেখানে তিস্তাকে নিয়ে লেখা হয়নি। তিস্তাকে নিয়ে রচিত হয়েছে গান,গল্প, কবিতা,কাব্য,নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতি। এমনকি আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। তাতে তিস্তার কি আসে যায়। বরং আপন মহিমায় তিস্তা নিজেকে উদ্ভাসিত করেছে।
এক সময়ের যৌবনা তিস্তা বৃদ্ধ পেরিয়ে আবার কৌশোরে পদার্পণ করেছে। তবে নদী হিসেবে নয় ফসলের মাঠ হিসেবে। তিস্তার বুকে জেগে উঠা এক সময়ের ধুধু বালুচরে এখন সবুজের হাতছানি। এখানে চাষ হচ্ছে ধান,গম,আলু ,ভুট্টা ,কুমড়া,মিষ্টি আলু,তিল,তিসি,রসুন,পিয়াজ ,বাদাম ও শাকসবজি ।দেখে যেন মনে হয় প্রকৃতি আপন মহিমায় নিজেকে সাজিয়েছে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যস্ত কৃষাণ কৃষাণিদের পদভারে মুখরিত থাকে তিস্তার চরাঞ্চল গুলো। এ যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। তিস্তা পাড়ের বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের দুঃখের দিন শেষ। তারা রাস্তা ও বিদ্যুৎ পেয়েছে। কিন্তু বর্ষায় যখন তারা নীড় হারানোর পদধ্বনি শুনতে পায় তখন তাদের আবেগীমন ডুকরে উঠে। শুষ্ক মৌসুমে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা পাড়ের দৃশ্যপট ক্রমশ পাল্টাচ্ছে। এ যেন সবুজের সমারোহ। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা প্রভাষক মাওলানা মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, এখানকার মানুষের দৈন্যদশা আর নেই। এখন তারা অনেকটা স্বাবলম্বী।
পড়ন্ত বিকালে যখন গাঢ় লাল সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে, তিস্তার বুকে ফসলের সবুজ পাতা গুলো কুয়াসার আলীঙ্গনে শিউরে উঠে তখন কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে-
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।
কিন্তু গবেষকদের ভিন্ন কথা বৈশ্বিক জলবায়ু ও উজানে বাঁধ নির্মানের ফলে তিস্তা মরুকরণের দিকেই এগুচ্ছে।