চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রশাসনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও উদাসীনতার কারণে উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পরে ও চালু হয়নি ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হল। দেওয়া হয়নি কোন আসন বরাদ্দ। অ্যাটাচমেন্ট তো দূরের কথা কোন অনুষদের ছাত্ররা থাকবে তাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ও শেখ হানিসার নামে দুটি হল বেশ ঘটা করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ছাত্রীদের দফায় দফায় আন্দোলনের পর খুলে দেওয়া হয় শেখ হাসিনা হল।হল খোলার ব্যাপারে প্রশাসন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না সুস্পষ্ট ধারণা।
অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দুদকের তদন্ত ও গাফিলতির কারণে থেমে থেমে কাজ হওয়াতে প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে আবাসিক হলটির।
তাছাড়া আবাসিক সংকট বিশ্ববিদয়ালয়ের কোন নতুন সমস্যা নয়। আবাসিক হল ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ২৩ কি.মি. দূরে শহরে অবস্থান করে। বঙ্গবন্ধু হল ব্যতীত ছাত্রদের জন্য ৭ টি হল থাকলে ও ছাত্রদের বৈধভাবে থাকাটা ও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া হল গুলো প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হীন। গত ৬ বছর যাবৎ ধরে আশ্বাস দিয়ে ও মিলছে না কোন আসন বরাদ্দ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন দায়িত্বকালীন ২০১৯ সালের এক ঘোষণায় বলেছিলেন, ঈদের ছুটি শেষে খুলে দেওয়া হবে। কিছু কাজ বাকি আছে। কিন্তু নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আশ্বাস দিয়েও আজ ও খুলে দেননি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, আমরা ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। আর কিছু কাজ বাকি আছে। তারপর চালু করা যাবে আশা করছি।
আসন বরাদ্দ বা অ্যাটাচমেন্ট নিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল ইসলাম বলেন, এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি কোন অনুষদের ছাত্ররা থাকবে। হলটি চালু হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সঠিক বলতে পারছি না কবে চালু হবে বঙ্গবন্ধু হল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় , গত ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ছাত্রদের জন্য ১৮৬ আসন বিশিষ্ট প্রায় ৪৫ হাজার বর্গফুটের দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করা হয়। হলটিতে দুটি লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগার, ৫০ কেভি পাওয়ারের জেনারেটর, ক্যানটিন, প্রার্থনা কক্ষ, ইনডোর গেম, কমন রুম, ইউনিয়ন রুম, টিভি রুম, ওয়েটিং রুম, প্রভোস্ট রুম, আবাসিক শিক্ষকদের রুম, লন্ড্রি, দোকানসহ রয়েছে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ না দিয়ে দেড় বছর পর ২০১৭ সালের মে থেকে হলটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮৬ আসন বিশিষ্ট দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলকে ৭৩৮ আসন বিশিষ্ট ছয় তালা ভবন করা হয়। ফলে এর মোট আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার ৮৪৮ বর্গ মিটার। যার নির্মাণ ব্যয় ৩৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী বিদ্যুৎ সরকার বলেন, চবি প্রশাসন ৭ বছরেও বঙ্গবন্ধু হল খুলে দিতে পারেনি, এটা প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক। প্রশাসন নিজেদের কার্যক্রম সঠিক লোক বা সঠিক ব্যক্তির হাতে দিতে পারেনি তার জন্য কার্যক্রম এখনো সম্পুর্ন করতে পারেনি। চবি প্রশাসন নিজ হাতে ভালো একটি সংগঠন তৈরি করে, কয়েকজন ব্যক্তির দ্বারা কমিটি গঠন করে হলের কাজের দায়িত্ব দিলে হয়তো হল তৈরির কার্যক্রম দ্রুত এগোতে পারতো। কিন্তু প্রশাসন নিজ হস্তে সঠিকভাবে কাজের দেখভাল না করায় ৭ বছরেও হলের কাজ সম্পুর্ন করতে পারেনি।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুকন্ঠ সরকার বলেন, হলটি দ্রুত চালু করে দেওয়া দরকার। কারণ আবাসন পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সমস্যা থাকাটা যুক্তিসঙ্গত নয়। তাছাড়া গ্রুপভিত্তিক রাজনীতির কারণে হলে আধিপত্য বজায় রাখা এসব কারণ বিবেচনা করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় এখনো চালু হয়নি।