৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
খেয়ে না খেয়ে ঝুপড়ি ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তালতলীর... নোয়াখালীতে মানুষের ধারে ধারে ব্যারিস্টার পারভীন... কুয়াকাটায় ধরা পড়ল দুই কেজির ইলিশ তীব্র গরম ও রোদে পুড়ছে সিলেট হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হিরো আলম

সিডরের জন্ম মারিয়া কেমন আছে ?

 মোঃ আসাদুজ্জামান,বরগুনাঃ সমকাল নিউজ ২৪

সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৪ বছর আজ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে উপকূলে আঘাত হেনে ছিল ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সিডর।’ সেদিন ধংসলীলায় মুহুর্তেই পাল্টে যায় উপকূলীয় এলাকার জনপদ।

সিডরের নির্দয় ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে উপকূলবাসী। সেসময় অনেকেই সহায়তার হাত বাড়ালে পরে গুটিয়ে নিয়েছে নিজেরদেরকে। ১৪ বছর পর অনেকটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাড়িয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

সিডরের যখন ভয়াল তান্ডব ঠিক তখন বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের আশ্রয়কেন্দ্রে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক কণ্যাশিশু। যার নাম রাখা হয় মারিয়া। সিডরের সময় জন্মানোয় দেশে তো বটেই, সারাবিশ্বে সে পরিচিতি পায় ‘সিডর বেবি’ হিসেবে।

এক পর্যায়ে মারিয়া ও তার পরিবারকে নতুন ঘর দেয়ার পাশাপাশি ভরন পোষণের আশ্বাস দেয় একাধিক উন্নয়ণ সংস্থা। ১৪ বছর পর বাস্তবতা, ভরন পোষণের সে আশ্বাসের কথা কেউই রাখেনি।

মারিয়ার বয়স এখন ১৪ বছর। পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বলেশ্বর পাড়ের পদ্মা গ্রামের মা বাবার সাথে বসবাস করে মারিয়া। বাবা ফারুক মোল্লা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসারের ভরণ পোষণের জোগান দেন। মা জাকিয়া বেগমের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক খন্ড জমিতে ঘর তুলে মা বাবার সাথে বসবাস করেন মারিয়া।

তবে বাবা মায়ের অভাবের সংসারে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি তার। তাই মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী মারিয়াকে বসতে হয়েছিল বিয়ের পীড়িতে। ২০২০ সালে বরগুনা পৌরশহরের নয়ন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় মারিয়ার। বিয়ের পর নয়নও আশ্রয় নেয় শ্বশুড় বাড়িতে। সেখানে থেকেই সাগর নদীতে ইলিশ শিকার করে মারিয়ার স্বামী নয়ন।

মারিয়ার মা জাকিয়া বেগম বলেন, সিডরের সময় মারিয়ার যখন জন্ম হয় তহন ব্রাক এনজিও আমাদের একটা ঘর দিয়েছিল। বাবার দেয়া জমিতে ঘরটা তুলে সেই ঘরেই আমরা এখন থাকি। তারা বলছিল মারিয়াকে লেখাপড়া করাবে, গরু দেবে আরো কতোকিছু। কিন্ত ওই ঘরটা ছাড়া কিছুই পাইনি। মারিয়ার ভরন-পোষণ তো দূরে থাক লেখাপড়ার খরচাও দেয়নায়। গরীব মানুষ আমরা। মেয়ে বড় হওয়ার পড় বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ১৪ বছর আগে দেওয়া ঘরটাও ভেঙে গেছে। এই ঘরে মেয়ে জামাই নিয়ে এখন থাকি। কেউ আমাদের খবরই নেয়না।

মারিয়ার নানা গোলাম মোস্তফা বলেন, সিডরের সময় আমার নাতিকে অনেককিছু দেবে বলেছিলো তারা। কিন্তু কিছুই দেয়নি। আমি নাতিটাকে থাকার জন্য একটু জায়গা দিয়েছি। সেই যায়গায় ব্রাকের দেয়া একটা ঘরে জামাই নিয়া থাকে আমার নাতিটা।

কথা হলে সিডর বেবি মারিয়া বলেন, সিডরের সময় জন্ম নিয়ে আমার জীবনটাও সিডরের মত হয়ে গেছে। নানুর বাড়তে থাকি। বাবায় যা কামাই রোজগার করে তাতে আমাদের সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হয়। অভাবের কারনে লেখাপড়া বন্ধ করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার স্বামী মাছ ধরে যা কামাই রোজগার করে তা দিয়ে মা বাবার সাথে একসাথে থেকে খাই। আমার লেখাপড়াটা যদি কেউ চালিয়ে নিত তবে আমি অনেক বড় হতে পারতাম। এই বয়সে আমার স্বামী সংসার করা লাগত না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মারিয়ার পরিবারের দিন কাটছে খুব কষ্টে। আমরা আমাদের সাধ্য মতো সাহায্য দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের কাছে মারিয়াদের জন্য একটি আবাসনের দাবি জানাচ্ছি।

ব্র্যাক বরগুনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়ক মারুফ পারভেজ বলেন, মারিয়াকে সহায়াতার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারপরও আমরা মারিয়ার বিষয়ে খোঁজ নেব। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহায়তা দেয়া হবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, সিডর বেবি মারিায়ার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আমরা তাকে সরকারের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব।

মোঃআসাদুজ্জামান

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
বরগুনা বিভাগের সর্বশেষ
বরগুনা বিভাগের আলোচিত
ওপরে