রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ মেলার স্বাদ নেওয়া পাহাড়ের তৃণমূলের শিক্ষার্থীদের সৌভাগ্যে জুটে না। এবছর পাহাড়বাসীকে বই মেলার ছোঁয়া দিতে তাই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড ও গুইমারা রিজিয়নের নির্দেশে মানিকছড়িতে দু’দিন ব্যাপি অমর একুশে গ্রন্থ মেলার আয়োজন করেছে সেনাবাহিনীর ৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট আরির্টলারি সিন্দুকছড়ি জোন।
২০ ফেব্রুয়ারী বুধবার সকাল ১১টায় মানিকছড়ি উপজেলা টাউন হল চত্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুপ্রেরণায় অনুষ্ঠিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায়’ সমবেত হয় উপজেলার শতশত শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা। এ যেন শিশু-কিশোরদের অসাধ্য-সাধন। একদিন আগেও এসব শিশু-কিশোররা স্বপ্নেও ভাবেনি তারা অমর একুশে গ্রন্থমেলা বা বই মেলা স্বচোখে দেখবে, কিংবা নিজ হাতে একটি বই কিনবে। এসএসসি পরীক্ষা চলমান থাকায় এমনিতে মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ তারপরও সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বই মেলার খবর পেয়ে হাসিমুখে শতশত ছেলে-মেয়েরা সকাল হতেই সমবেত হয়েছে গ্রন্থমেলায়। সিন্দুকছড়ি সেনাবাহিনীর আয়োজনে এ গ্রন্থমেলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার ৮টি প্রকাশনী এ মেলায় স্টল সাজিয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ২ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড ও গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক ও পাহাড়ে অমর একুশে বই মেলার স্বপ্নদ্রষ্টা লে.কর্ণেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব, মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশেপ্রু মারমা, মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ নোমান মিয়া, মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আঃ রশীদ, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া, সিন্দুকছড়ি জোন উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ তৌহিদ সালাহ উদ্দিন, মানিকছড়ি সাব-জোন অধিনায়ক লেঃ ওয়ালিউল্লাহ, সনাতন নেতা সজল বরণ সেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার অতিথিদের নিয়ে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। পরে অতিথিরা স্টল পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং সর্বশেষ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম বলেন, বই জ্ঞান ও জীবন গঠনের একমাত্র প্রতীক, জ্ঞান অর্জন ছাড়া পৃথিবীতে কেউই প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। শিক্ষার এবং জীবন গঠনের জন্য অবশ্যই বইয়ের আশ্রয় নিতে হবে। এ অঞ্চলের হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠির শিশু-কিশোরেরা হয়তো শহরে গিয়ে বই মেলায় বিচরণ করা সম্ভব হয়ে উঠবেনা। এ বিষয়টি সেনাবাহিনীর নজরে এসেছে, তাই আজকের এ আয়োজন।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, নিজেকে জানতে হলে, গড়তে হলে বইয়ের বিকল্প নেই। সকলের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে, যে যত বেশি বই পড়বে, সে তত জ্ঞানী হবে। পৃথিবীতে বই পড়ে কেউই ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গুণগত মানের পড়ালেখা ও মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রয়োজন। পাহাড়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নে সৃজনশীল কার্যক্রমে সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি বিকাল পর্যন্ত এ গ্রন্থমেলা চলবে।