আর আই সবুজ, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি :: প্রতি শুক্র, শনি ও সোমবার রাজশাহী নগরীর বহরমপুর সিটি বাইপাস মোড়ের শাহজাহানের বাড়িতে গেলে মনে হবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মেলা বসেছে। বই-খাতা, স্লেট-পেন্সিল নিয়ে সেখানে প্রায় ৩০-৩৫ জন সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় বাচ্চা পড়ালেখা করে। তাদেরকে পড়ান একদল তরুণ-তরুণী। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত যুবা সবমিলিয়ে ২২ জন পালাক্রমে এই বাচ্চাদের পড়ান। তারা সবাই ‘স্বপ্নবৃত্ত চ্যারিটি ফাউন্ডেশন’র এর সদস্য।
নাম পড়েই হয়তো অনুমান করা যায়, এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ‘মানবতার স্পর্শে দুঃখ হোক আনন্দের’ স্লোগানে মানবসেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছে সংগঠনটি। গত ৩ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির পথচলার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই এক বছরে মানুষকে সেবা দিয়ে ও বাচ্চাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে সুন্দর সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বুনে চলেছেন সংগঠনের তরুণ সদস্যরা।
‘স্বপ্নবৃত্ত পাঠচক্র’র মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত, গরীব ও অসহায় শিশুদের পাঠদান, অসহায় মানুষদের জীবনমান উন্নয়ন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান, উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, ব্লাড গ্রুপিং, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানারকম সেবামূলক কাজ করে স্বপ্নবৃত্ত চ্যারিটি ফাউন্ডেশন।
মানুষকে সেবা দিতে কারো কাছে হাত পাতে না এই ফাউন্ডেশন। সংগঠের চল্লিশোর্ধ সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও সভাপতির মোটা অঙ্কের অনুদানে চলে সংগঠনের যাবতীয় কাজ।
এখানেই থেমে নেই সংগঠনের কাজ। সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে বাড়ছে এর পরিধি। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় কাজ করেন এই সংগঠনের আরো ১০ সদস্য। সেখানে তারা সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সারদার ৮ জন শিশুকে প্রতিমাসে উপবৃত্তি প্রদান ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মাঠে সংগঠনের প্রথম বর্ষপূতি উদ্যাপন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- গ্লোবাল নাসিং ইনস্টিটিউটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ সাইফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহ্ মখদুম কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেন, ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সভাপতি শামীউল আলীম শাওন ও দৈনিক সানশাইনের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, যারা এই আয়োজনের কারন সেই ছোট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বড় হতে বেশি কিছু লাগে না। ছোট দুই-একটা জিনিস মেনে চললেই জীবনে বড় হওয়া যায়। তোমরা কখনো মিথ্যে বলবে না, দেখবে সফলতা আসবে।
উপস্থিত শিশুদের মায়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নেপোলিয়ন বলেছিলেন আমাকে শিক্ষিত মা দাও; আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। শিক্ষিত মা মানেই যে বিশ^বিদ্যালয় পাশ হতে হবে তা না। বাচ্চাকে মিথ্যে না বলতে শেখানো, স্কুলে কারো সাথে ঝগড়া করলে তাকে সরি বলতে শেখানো এগুলোই বড় শিক্ষা। এসময় তিনি স্বপ্নবৃত্ত চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। এছাড়াও তিনি এবং বিশেষ অতিথিরা এই সংগঠনের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া জানান, সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন ও তারা যেন সমাজ থেকে ঝরে না যায় সেই লক্ষে কাজ করছেন তারা।
সংগঠনের সহ-সভাপতি শাহিনুর ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলামসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্বপ্নবৃত্ত পাঠচক্রের ত্রিশোর্ধ শিশু, অভিভাবকবৃন্দ ও সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
‘বিদ্রঃ সমকালনিউজ২৪.কম একটি স্বাধীন অনলাইন পত্রিকা। সমকালনিউজ২৪.কম এর সাথে দৈনিক সমকাল এর কোন সম্পর্ক নেই।’