ছবি: বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া এবং কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা
নিজস্ব প্রতিবেদক: রুনা লায়লা। এক নামেই সঙ্গীত দুনিয়ায় যার পরিচয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উপমহাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব তার ষাটের দশকেই। সম্প্রতি সঙ্গীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ করতে চলেছেন এই কিংবদন্তিস ঙ্গীতশিল্পী। এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসেও রুনা লায়লার তুলনা যেন শুধুই তিনিই। জনপ্রিয়তা, সফলতা, প্রাপ্তির সঙ্গে এতটা বছর পাড়ি দিয়ে তিনি নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য কমসংখ্যক মানুষেরই জোটে।
এবারের ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে নতুন একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ধ্রুপদী এই সঙ্গীতশিল্পী। বাণিজ্যিক কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতার প্রযোজিত “ভেজা ভেজা রাত, ভেজা ভেজা মন” শিরোনামের গানটির কথা লিখেছেন খ্যাতিমান গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এবং সুর করেছেন সাদেক আলী। গানের পাশাপাশি বাণিজ্যিক কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতারে “একান্ত ভুবন” অনুষ্ঠানে দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে প্রায় ১০ হাজার গান গেয়েছেন এই মহাতারকা। এন্ড্রু কিশোর, সৈয়দ আব্দুল হাদী, সুবীর নন্দী থেকে শুরু করে আগুন, পলাশ, আসিফ আকবর এমনকি হালের ইমরানের সাথেও দ্বৈত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
সঙ্গীত জীবনের ৬০ বছরে পদার্পণ করতে যাওয়া এ মহারথী ভারতের রেডিও মিরচি থেকে পেয়েছেন “চীর নবীন সুরশ্রী-২০১৪’ পুরস্কার। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ৬০ বছরের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পরও রুনা লায়লার গায়কী আছে ঠিক আগের মতোই। একটুও যেন নড়চড় নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে তো বটেই, স্টেজে এখনও একইভাবে রুনা লায়লার গানে আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত হন শ্রোতা-দর্শক।
১৯৫২ সালের ১৭ই নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করা এ গায়িকা আবদুল কাদের পিয়ারাঙ ও ওস্তাদ হাবিবুদ্দিন খানের কাছে গানের তালিম নেন। তখন তিনি করাচিতে থাকতেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে গান শুরু করেন রুনা। এরপর মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকের খাতায় নাম লেখান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্লেব্যাক করেন পাকিস্তানের অনেক ছবিতে। ১৯৭৪ সালে ‘এক ছে বারকার এক’ ছবির মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু হয় তার। একই বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবিতে একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন রুনা।
বাংলা, হিন্দি, উর্দু গানে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ গানটি রুনা লায়লাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এ গানটি পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেরই গানপাগল শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিন দেশের বিভিন্ন ভাষায় গান গাওয়ার পাশাপাশি তার গাওয়া গজল গানও উপমহাদেশের শ্রোতাদের কাছে সেই সময়েই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
কিংবদন্তি এই শিল্পী গানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানে দু’বার নিগার পুরস্কার, ক্রিটিক্স পুরস্কার, গ্র্যাজুয়ের পুরস্কার ও জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গাল পুরস্কার। বাংলাদেশে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন রুনা লায়লা।
এমদাদ আলী এবং আমিনা লায়লার কন্যা রুনা লায়লারা দুই ভাই এক বোন। বোন দীনা লায়লা ও ভাই সৈয়দ আলী মুরাদ। চিত্রনায়ক আলমগীর তার স্বামী।