
সুনামগঞ্জের ছাতকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমকারী হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা মো. আব্দুল শহিদ (৪৫) অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ছাতক থানার বিশেষ অভিযানে মন্ডলীভোগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ছাতক পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের (শাহজালাল আবাসিক এলাকা) মৃত আছকির আলীর ছেলে এবং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি শহিদের গ্রেফতারের খবরে সাধারণের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লেও, তার নেপথ্যের পৃষ্ঠপোষকরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আগেও শহিদ ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, শারীরিক নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। তার প্রভাবে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও নিরাপদ বোধ করতেন না। শহিদকে স্থানীয়রা একজন ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ হিসেবেই চিহ্নিত করেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে চরমভাবে হেয় করা, মারধর করা অথবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। গণঅভ্যুত্থানের পরেও তার দাপটে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ সঞ্চয় করতে পারেননি।
গত ১৯ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনা শহিদের বিরুদ্ধে জনরোষকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়। একটি সালিশি বৈঠকে নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি এক পক্ষকে প্রকাশ্যে মারধর করেন। ভুক্তভোগী প্রাণ বাঁচাতে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিলে শহিদ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেই বাড়িতে হামলা চালায়। স্থানীয়দের দৃঢ় হস্তক্ষেপে বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো গেলেও পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকেই শহিদ এই ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জনমনে এখন প্রশ্ন, শহিদের গ্রেফতার কেবল লোকদেখানো পদক্ষেপ কিনা। কারণ যদি মূল পৃষ্ঠপোষকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন, তবে তাকে বেশিদিন আটক রাখা সম্ভব হবে না বলে অনেকেরই আশঙ্কা।
এ বিষয়ে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃত মো. আব্দুল শহিদকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার সহযোগী এবং নেপথ্যের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে আমাদের অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।































