৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

samakalnew24
samakalnew24
শিরোনাম:
চাঁদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ী নিহত চাঁদপুরে ইয়াবা-ফেন্সিডিলসহ যুবক-যুবতী আটক গ্রাহক সেবা পক্ষ উদযাপনে বেতাগীতে বৃক্ষরোপণ ও পুরস্কার... ইসাহাকের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে পীরগঞ্জে বিক্ষোভ ও... পার্বতীপুরে ২৮ শে অক্টোবর লগি-বৈঠার নির্মম নারকীয়...

এ যেন জীবন্ত সেই ‘বঙ্গবন্ধু’।

 অনলাইন ডেস্ক। সমকাল নিউজ ২৪

Warning: Use of undefined constant yes - assumed 'yes' (this will throw an Error in a future version of PHP) in /home/samakaln/public_html/wp-content/themes/samakalnews24/template-parts/content.php on line 37

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গোপালপুর বাজার। একটি ব্যস্ততম এলাকা এটি। তবে বাজারের একটি জায়গায় এসে সবারই যেন ব্যস্ততা থমকে দাঁড়ায়। কাজ ভুলে সবাই একটু দাঁড়িয়ে পড়েন। দেখেন কাঠের তৈরি বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতি। এটি অন্যান্য প্রতিকৃতির মতো নয়, দেখলে মনে হয় যেন জীবন্ত সেই বঙ্গবন্ধু সামনে চলে এসেছেন।

২০১২ সালের আগস্ট থেকে এভাবে সবার নজরে আসছে শিল্পী গোলাম মোস্তফার তৈরি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি। বারহাট্টা বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ সোহাগ জানান, তিনি শিল্পী গোলাম মোস্তফার ছেলের বন্ধু। বন্ধুত্বের খাতিরে ছোটবেলা থেকেই শিল্পীর বাড়িতে তার যাতায়াত ছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির কাজ শুরু করার সময় থেকে তিনি প্রতিকৃতিটিকে দেখেছেন। কাজ শেষ হওয়ার পর গোলাম মোস্তফার প্রতিভায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। বলেন, ‘আমার দেখা যেকোনো প্রতিকৃতির মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এটি। কারণ শুধু কাঠ দিয়ে এমন নিখুঁতভাবে কোনো কিছু তৈরি করতে আমি এর আগে কখনো দেখিনি। বঙ্গবন্ধুর আকার, আকৃতি সবদিক ঠিক রেখে এটিকে বানানো হয়েছে। তার এই কাজটি আমাদের নেত্রকোনাসহ সারাদেশের জন্য একটি গর্ব।’

স্থানীয়দের সদিচ্ছার অভাবে ২০১২ সাল থেকে অনেকটা অনাদরে রয়ে গেছে এই অনন্য প্রতিকৃতিটি। পারভেজ বলেন, ‘যে গুরুত্ব এই কাজটির পাওয়া উচিত, তা পায়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের ইচ্ছার একটি অভাব আছে। বর্তমানে যেখানে এটিকে রাখা হয়েছে সেটিও উপযুক্ত জায়গা নয়।’

বারহাট্টা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা মনে করেন, সৃষ্টিশীল কাজের যোগ্যতা সবার থাকে না। গোলাম মোস্তফারা তাদের কাজের স্বীকৃতি না পেলে অনেকেই সৃষ্টিশীল কাজ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

গোলাম মোস্তফার কাজটি ‘অনন্য’ বলে আখ্যা দেন নেত্রকোনার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রবিন। বলেন, ‘আমি প্রতিকৃতিটি দেখেছি। এটি একটি অনবদ্য সৃষ্টি। সৃষ্টিশীল কাজের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আমার মতে এটির মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।’

২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রতিকৃতিটি তৈরি করতে কাজ শুরু করেন শিল্পী গোলাম মোস্তফা। কেবল কাঠ দিয়ে তিনি এই প্রতিকৃতিটি তৈরি করেন। তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর কাজ শেষ হয়। আট মাস পর ২০১২ সালের ২১ আগস্ট সবার জন্য এটির প্রদর্শন উন্মুক্ত করা হয়।

সেই থেকে বারহাট্টা সদর উপজেলার গোপালপুর বাজারে একটি দোকানে রাখা হচ্ছে জাতির জনকের প্রতিকৃতিটি। প্রতিদিন অনন্য এই শিল্পকর্ম দেখতে ভিড় করেন আশপাশের মানুষ। বাদ যাচ্ছে না পাশের জেলার বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মীরাও।

শুধু কাঠ দিয়ে তৈরি কারো পূর্ণাঙ্গ মূর্তি এটিই প্রথম। কাঠে ঘুণ ধরে বা অন্য কারণে যেন নষ্ট না হয়ে যায়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই এটিকে নির্মাণ করা হয়েছে। মূর্তির প্রতিটি অঙ্গ নাড়াচাড়া করানো যায়। ফলে দাঁড়ানো ও বসা সহকারে সব অঙ্গভঙ্গি করতে পারে জাতির পিতার এই মূর্তিটি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মূর্তিটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় জীবন্ত বঙ্গবন্ধু সামনে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূর্তিটির একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর এই একই মন্তব্য বারবার উঠে এসেছে।

কথা হয় শিল্পী গোলাম মোস্তফার সঙ্গে। তার কাজের শুরু এবং বর্তমান সম্পর্কে জানান। বলেন, ‘জীবন তো একদিন শেষ হয়ে যায়। আমিও চলে যাব। কিন্তু আমি চাই আমাকে সবাই আমার কাজে মধ্যে মনে রাখুক। তাই বঙ্গবন্ধুর এই প্রতিকৃতিটা বানাইছি। আমি চাই, আমি মারা যাওয়ার পর মানুষ আমাকে বঙ্গবন্ধুর এই ছবির মাধ্যমে মনে রাখুক।’

এরই মধ্যে অনেকেই অর্থের অঙ্কে কিনতে চেয়েছেন এই শিল্পকর্মটি। তবে বিক্রি করার জন্য এটি বানাননি বলে জানান গোলাম মোস্তফা। বলেন, ‘প্রয়োজনে আমি ভিক্ষা করে খাব। তারপরেও বঙ্গবন্ধুর ছবি বিক্রি করে বা এর অজুহাতে কারো থেকে এক টাকা নিয়া খেতে আমি রাজি না।’

পেশায় চিত্রশিল্পী গোলাম মোস্তফা। জানা গেছে, জাতির জনকের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ছবি এঁকেছেন তিনি। আর সেগুলোও টাকার দরে বিক্রি করেন না। অন্যের ছবি এঁকে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে গোলাম মোস্তফার।

মারা যাওয়ার আগে এই শিল্পকর্মটি জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে চান গোলাম মোস্তফা। তার বিনিময়ে কোনো কিছু পেতে চান না বলে জানান প্রতিভাধর এই শিল্পী।

প্রতিদিনের খবর পড়ুন আপনার ইমেইল থেকে
ফিচার বিভাগের সর্বশেষ
ওপরে