আসন্ন পবিত্র ঈদুল আয্হা উপলক্ষে নওগাঁর রাণীনগরে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ও কোন রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই পারিবারিক ভাবে ছোট-বড় ও মাঝারি খামারে প্রায় ১৬ হাজার পশু কোরবানি বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আর এসব কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন স্থাণীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চলতি বছর রাণীনগরের খামারীরা কোরবানির পশু প্রস্তুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছেন। এখাকার দেশী জাতের ষাঁড় অন্য এলাকার চাহিদা মেটাতে সরবরাহ করা হবে বলে খামারীরা জানিয়েছেন।
রাণীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পারিবারিক পর্যায় ও ছোট-বড় খামারে ক্ষতিকর ইন্ডিয়ান বড়ি, ডেক্সামেটাসন বরি না খাইয়ে কোরবানির মৌসুমে পুষ্টিকর প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করণ করা হয়। বিশেষ করে দেশী জাতের ষাঁড় গরুর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হয়।
এছাড়াও গাভী (ফুল বকনা), বলদ, মহিষের চাহিদা মোতাবেক পালন করা হয়। একই সাথে রয়েছে পারিবারিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন। কোন প্রকার ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে রাণীনগরের প্রায় ১ হাজার ৭ শ ১৩ জন পারিবারিক ভাবে ছোট-বড় ও মাঝারি খামারে প্রায় ১৫ হাজার ৯ শ ১৭টি পশু কোরবানি বাজারের জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে গরু ৭ হাজার ১ শ ৮৮, ছাগল ও ভেড়া ৮ হাজার ৭ শ ২৯টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মনে করছে এবারের ঈদুল আয্হাতে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন বাড়িতে উপরোক্ত পশুর যে সংখ্যা তার চেয়ে আরো বেশকিছু দেশী জাতের ষাঁড় রয়েছে যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার চাহিদাও মেটাবে।
রাণীনগর উপজেলায় গরু, ছাগল বা ভেড়ার ছোট-খাটো বেশ কয়েকটি খামার থাকলেও কাশিমপুর ইউনিয়নে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের নিজ হাতে গড়ে তোলা ‘পল্লীশ্রী কৃষি প্রদর্শনী সমন্বিত খামার’ উল্লেখযোগ্য। এই খামারটি ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান কৃষি পদক অর্জন করে।
খামারের পরিচালক উপজেলার বেলবাড়ি গ্রামের মাসুদুর রহমান রনি জানান, তাদের খামারে কোন প্রকার রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে কোরবানি বাজারে বিক্রিযোগ্য ৩০ টি গরু, ২৫টি ছাগল ও ৩৫টি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক ভাবে ৩ থেকে ৫ টি গরু-ছাগল নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অধিকাংশ খামার। আর ব্যক্তিগত ভাবে একটি দুটি করে গরু অধিকাংশ বাড়িতেই রয়েছে। সকল ধরনের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালনে স্থাণীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
‘পল্লীশ্রী কৃষি প্রদর্শনী সমন্বিত খামার’র পরিচালক মাসুদুর রহমান রনি বলেন, আমরা এই খামারে কোরবানির জন্য ষাঁড় ও দুধের গাভী পালন করি। নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের মাধ্যমেই এই খামারের গরু মোটাতাজা করণ করা হয়। কোন প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করায় আমাদের খামারের গরু, ছাগল ও ভেড়ার স্থানীয় বাজারে ব্যপক চাহিদা থাকে। যে কোন প্রয়োজনে আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে থাকি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারী সার্জন ডা: মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, খামারিদের রাসায়নিক স্ট্রেরয়েড প্রয়োগ ব্যতীত স্বাস্থ্যসম্মত সুস্থ্য সবল গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া পালনে প্রয়োজনীয় সকল ধরণের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া খামারিদের নিয়ে প্রতি মাসে সচেতনতা সভা করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে। আবার কোরবানির হাটে যেন অস্বাস্থ্যকর গরু বেচাকেনা না করতে পারে সেজন্য এখন থেকেই প্রতিহাট আমাদের নজরদারিতে রাখা হয়। বর্তমানে কোরবানীর হাট মনিটরিং এবং প্রাণি স্বাস্থ্যসেবা মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে।
এছাড়া কৃত্তিম প্রজনন টেকনিশিয়ানসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক ভাবে প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবায় নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। এছাড়াও কোরবানির পশুর চামড়া সঠিক পন্থায় সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় কসাইদেরও ইতিমধ্যে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. আবু তালেব বলেন, রাণীনগর উপজেলার খামারীরা কোরবানির পশু প্রস্তুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এই উপজেলায় কোরবানির জন্য পশু আমাদানি করতে হবে না। বরং এখাকার দেশী জাতের ষাঁড় অন্য এলাকার চাহিদাও মেটাবে।
































